বাড়িটি ফিরিয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা
বর্তমানে থানা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া বাড়িটি জনগণের সেবার জন্য সরকারকে ফিরিয়ে দিলেন শেখ রেহানা । সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করে। তখন বিদেশে অবস্থান করায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা প্রাণে বেঁচে যান। মা-বাবা-ভাই-আত্মীয়-স্বজন সব হারিয়ে শেখ রেহানা তখন এতিম। এতটুকু আশ্রয়ও ছিল না। মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার ২০০১ সালের ১১ জুলাই ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার এক বিঘার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি (বাড়ি নং ৪১/এ (পুরাতন) ২১ (নতুন), সড়ক নং-৬) প্রতীকি মুল্যে জাতির পিতার কন্যা হিসেবে শেখ রেহানার নিকট বিক্রয় দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন করা হয়।
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া ও সন্তানদের সরকার ১৯৮১ সালে যেভাবে গুলশানে ৩২ কাঠার পরিত্যক্ত বাড়িটি ১০১ টাকায় বিক্রি করেছিল একইভাবে সরকার এই বাড়িটি দেয়। খালেদা জিয়া এখনো গুলশানের সেই বাড়ির মালিক। কিন' জাতির পিতার কন্যা শেখ রেহানার ক্ষেত্রে তার বিপরীতটা ঘটেছে। বিএনপি-জামাত জোট সরকার বিনা নোটিশে ২০০২ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ রেহানার বাড়িটি দখল করে। অথচ সরকার রেজিস্ট্রি করে বাড়িটি শেখ রেহানার নিকট বিক্রি করে। তাঁর নামে নামজারীও করা হয়। বাড়ীটিতে কর্মরত ৯ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।শেখ রেহানার মনোনিত প্রতিনিধি বেগম মঞ্জিলা ফারুক বাড়িটি হস্তান্তরের জন্য হাইকোর্টে রীট আবেদন করেন। রীট মামলা থাকা সত্ত্বেও সরকার ২৭ মার্চ ২০০৩ তারিখে বাড়িটি ডিএমপিকে বরাদ্দ দিয়ে দখল বুঝিয়ে দেয়।বিএনপি সরকার ২৭ জুন ২০০৫ তারিখে শেখ রেহানার এই বাড়িটিকে ধানমন্ডি থানার কার্যালয়ে পরিণত করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেদিন এই থানা ভবন উদ্বোধন করেন।
২৮/০৬/২০০৫ তারিখে তথ্য অধিদপ্তর সূত্রে প্রকাশিত খবরে জানানো হয় 'ধানমন্ডি থানা ধানমন্ডি ৬নং রোডে একটি ভাড়া বাড়িতে স্থানান্তর করা হয়েছে।' কত বেশি হীনমন্য হলে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বেআইনীভাবে অন্যের বাড়িদখল করে সেই বাড়ি থানাতে রূপান্তরিত করেন?তৎকালীন সরকার ০৫/০৯/২০০৫ তারিখে শেখ রেহানার নামে বরাদ্দকৃত বাড়ী যা পরবর্তীতে ধানমন্ডি থানা, সেখান থেকে এক কাঠা জমি প্রতিবেশী সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে (যার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা ছিল)বরাদ্দ দেয়।খালেদা জিয়া তখন ঢাকা ক্যন্টনমেন্টের বিলাস বহুল বাড়িতে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। গুলশানের ৩২ কাঠার বাড়ি তো আছেই।মঈনুল রোডের বাড়িটি ছিল ১৬৮ কাঠার। আশপাশের জায়গা-জমি দখল করে বাড়িটি দাঁড়িয়েছিল ২২৮ কাঠায়। প্রচলিত আইন অনুযায়ী একই ব্যক্তি একই সাথে দুটি সরকারী জমি /বাড়ী ভোগ করতে পারেন না। তিনি তাঁর করা এ আইনটি লঙ্ঘন করে জাতিকে কী বোঝাতে চাইলেন?
ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বাড়িটির বরাদ্দ বাতিল করে। তিনি উচ্চ আদালতে গিয়েও অবৈধ দখলকে বৈধ করতে পারে নি। আদালতের রায় বিরুদ্ধে যায়। ফলে তিনি বাড়ী ছাড়তে বাধ্য হন। অবৈধ দখলে রাখা বাড়িটি ছাড়ার সময় তার অঝোরে কান্না মানুষ দেখেছে। এমনকি জিয়ার মৃত্যুর দিন, ৩০ মে ১৯৮১ তেও তার এমন কান্না কেউ দেখেনি।শেখ রেহানার কোনো বাড়িঘর ছিল না। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে সরকার তাঁকে একটি বাড়ি দিয়েছে। বাড়িটি জবর দখল করা হলো। জাতির পিতার কন্যা হওয়াটাই কি শেখ রেহানার অপরাধ? পরবর্তীতে শেখ রেহানা রীট মামলা প্রত্যাহার করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে বাড়িটি সরকারকে দিয়ে দেবেন। খালেদা জিয়ার গুলশানের বাড়ির মতো ভাড়া দিলেও এই ১১ বছরে কমপক্ষে তিন কোটি টাকা ভাড়া পেতেন। সরকার তা দেয় নাই। বাড়িটিতে থানা হয়েছে। থানার পুলিশ স্থানীয় জনগণকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। এ বাড়ি থেকে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হচ্ছে। জনগণের সেবার জন্য বাড়িটি তিনি সরকারকে দিয়ে দিচ্ছেন। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে তিনি বাংলার জনগণের স্নেহ-ভালোবাসা নিয়ে বাকী জীবনটা কাটাতে চান।